Maharaja Tomar e Selam An ode to Raja Rammohan Roy

মহারাজ তোমারে সেলাম
'' ভাব সেই একে, জলে স্থলে শূন্যে যে সমানভাবে থাকে।
যে রচিলো এ সংসার , আদি অন্ত নাহি যাঁর,
সে জানে সকলে , কেহ নাহি জানি তাঁকে। ''
ব্রাহ্ম সমাজ। হিন্দু কলেজ। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলন। সতীদাহ প্রথা রোধ।
কলকাতাকে ভারতের 'সংস্কৃতিক রাজধানী' বলা হয়। আর বাঙালি জাতি নিজেদেরকে অন্যান্য ভারতীয় জাতিগোষ্ঠী-র তুলনায় উন্নতর বলে মনে করে। কেন ? কারণ শুরুতে বলা, সব কটি সমাজ -শিক্ষা -ধর্ম ও চিন্তনের যে আন্দোলন; গোঁড়ামি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যে লড়াই তার পটভূমি রচিত হয়েছিল -এই বঙ্গদেশেই। তার পুরোধা ব্যাক্তি ছিলেন রামোহন রায়। কালক্রমে রাজা রামোহন রায়। চৈতন্যদেবের যোগ্য উত্তরসূরি , প্রথম আধুনিক ভারতীয় , সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালিদের অন্যতম। ইউরোপের বাইরে একমাত্র এই বাংলাতেই হয়েছিল 'নবজাগরণ' । মানুষ যখন পরকালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে , মর্তিপুজোর বদলে , ইহকালের দিকে তাকিয়েছিলো , শুরু হয়েছিল নবজাগরণ। এই জীবনমুখী চেতনার প্রচার -প্রসার ঘঠিয়েছিলেন রামমোহন। আর যাঁর হাত ধরে হয়েছিল, আত্মবিস্মিত জাতির মগ্নতায় আচ্ছন্ন । ২৫০ - তম জন্মবর্ষের সূচনায় 'প্রতিদিন শোনো-র এই বিস্ময়কর ইতিহাসের প্রতি সশ্রদ্ধ নিবেদন।
মে ২২,১৭৭২ সালে হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে, রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন এক সম্ভ্রান্ত কুলীন -বন্দ্যোপাধ্যায় -ব্রাহ্মণ বংশে। । প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত ফারুখশিয়ারের আমলে বাংলার সুবেদারের আমিনের কাজ করতেন। সেই সূত্রেই বোধ হয় 'রায়' পদবি , উপাধি হিসেবে পাওয়া । পিতা রামকান্ত। রামকান্তের তিন বিবাহ। মধ্যমা পত্নী তারিণীর এক কন্যা ও দুই পুত্র - জগমোহন ও রামমোহন। ওনার বংশ ছিল বৈষ্ণব, কিন্তু রামমোহনের মাতা ছিলেন ঘোর তান্ত্রিক ঘরের কন্যা। তন্ত্রশাস্ত্রবেত্তা সুপণ্ডিত নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারে পরে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী কুলাবধূত - এর সহযোগিতায় রামমোহনের সংস্কৃতে বুৎপত্তি, বেদান্তে অনুরাগ হয়েছিল।বারাণসী থেকে প্রথাগত সংস্কৃত শিক্ষার পর তিনি পাটনা থেকে আরবি ও পারসি ভাষা শেখেন। পরে তিনি ইংরেজি, গ্রিক ও হিব্রু ভাষাও শেখেন। তরুণ বয়সে তিনি কলকাতায় মহাজনের কাজ করতেন। ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। কলকাতায় প্রায়ই আসতেন এবং কোম্পানির নবাগত অসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাঁদের নানা বিষয়ে সাহায্য করেন। এই সুযোগে ভালো করে ইংরেজি শিখে নেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজে সিভিলিয়ান কর্মচারীদের মধ্যে, জন ডিগবির সঙ্গে তাঁর সর্বাধিক ঘনিষ্ঠতা হয়। কোম্পানির কাজে ডিগবির অধীনে তিনি দেওয়ানরূপে, রংপুরে কাজ করেন ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে তিনি দু'বার ভুটান সীমান্তে যান কোম্পানির হয়ে ডিগবির সাহচর্যে। ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রামমোহন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন। কি উজ্জ্বল, আলোকময়, পথ -দিশারী অথচ কী একাকীত্ব, কী গভীর নির্লিপ্ত জীবন !
এই সময় থেকেই শুরু হয় তার সামাজিক আন্দোলনের সলতে পাকানো। কিন্তু তিনি কি আজ প্রাসঙ্গিক ? জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী যখন মনুবাদ-সামাজিক অস্পৃশ্যত্যা থেকে 'আজাদী' চেয়ে স্লোগান দেয় ; ২০২১- র পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে , সর্বভারতীয় দলের নেতারা নিজেদের বাঙালি প্রমান করার চেষ্টা করে, সব মনীষীদের নাম নেয় কিন্তু রামমোহন রায়-র নাম সযত্নে এড়িয়ে যায়, পায়েল রোহতাগির মতো অর্বাচীন মানুষ যখন টুইটার-এ তাঁকে গালমন্দ করেন তখন বোঝা যায় - রামমোহন রায় আজকের ভারতবর্ষেও তার দর্শনের প্রয়োজন আছে। সাধে কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে , 'নব্য ভারতের চিত্তদূত ' বলেছিলেন !
রামমোহন মূল কোরান , আরবি-ফার্সি সাহিত্য পাঠের ফলে একেশ্বরবাদ ও উদার মানবতা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে। একেশ্বরবাদ মানে ঈশ্বরের একত্ববাদে বিশ্বাস অর্থাৎ শুধুমাত্র একজন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস। এই ধারনায় বিশ্বাসীরা সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা, পালনকর্তা অথবা সংহারকর্তা হিসেবে একটিমাত্র সত্ত্বায় বিশ্বাস ও তার আরাধনা বা উপাসনা করে থাকে।তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ফারসি ভাষায় লেখা এবং ভূমিকা অংশ আরবিতে, 'তুহফাতুল মুহাহহিদিন'। বইটিতে একেশ্বরবাদের সমর্থন আছে। এরপর একেশ্বরবাদ বা ব্রাহ্মবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেদান্ত-সূত্র ও উপনিষদগুলি বাংলার অনুবাদ করে প্রচার করতে থাকেন।
সমমনস্ক বন্ধুদের নিয়ে তৈরী করেন 'আত্মীয় সভা'। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নাম ও রূপ দেন। শুরু হয় যুক্তিবাদ দিয়ে আলোচনা। প্রতিটি ধর্মের মূলনীতিগুলি অধ্যয়ন করে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, প্রতিটি ধর্মের উদ্দেশ্যই এক। তা হল, মানবজাতির নৈতিক পুনর্জাগরণ। তাই প্রতিটি ধর্মের নীতিগুলি পরিবর্তিত যুগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা ও পুনরায় পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। সেই জন্যই তিনি ভেবেছিলেন হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করার আবশ্যকতা নেই। তিনি প্রতিটি ধর্মের বিশ্বজনীন নীতিশিক্ষাগুলি সংশ্লিষ্ট ধর্মের গোঁড়ামি, আনুষ্ঠানিকতা ও কুসংস্কারগুলি বাদ দিয়ে গ্রহণ করেন। ১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয় তার ধর্মীয় সংস্কার সংক্রান্ত বইগুলি যেমন , 'বেদান্তগ্রন্থ', 'বেদান্তসার', 'কেনোপনিষদ', 'ঈশোপনিষদ', 'কঠোপনিষদ', 'মাণ্ডূক্যোপনিষদ' ও 'মুণ্ডকোপনিষদ'। যদিও , নিরাকার ব্রহ্ম সাধনা পরিচিতি লাভ করেছিল , বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী-র হাত ধরে।
ব্রাহ্মাণ্যবাদ ও জাতিভেদ-এর বিরুদ্ধে কথা বললে, আজকের ভারতও দাঙ্গা বাধিয়ে দেয়। স্বাভাবিক ভাবে, ২৫০ বছর আগের ভারতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো। রক্ষণশীল ব্যক্তিরা ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর লেখার প্রতিবাদ দেখাতে লাগলেন। এই সব প্রতিবাদ কটূক্তিপূর্ণ এবং বিদ্বেষ ভাবাপন্ন। প্রতিবাদ-কর্তাদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার।রামমোহনও প্রতিবাদের প্রতিবাদ করলেন যুক্তি দিয়ে ও ভদ্রভাষায়।
এরপর প্রয়োজন ছিল , এই নতুন ধর্মের আচার ও উপাচারের। ১৮২৮ সালে রামমোহন ও তাঁর কয়েকজন বন্ধুর রচিত গান নিয়ে প্রথম ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’ নামক এক সঙ্গীত সংকলন প্রকাশনা শুরু হয়। রাজনারায়ণ বসু ও আনন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ সম্পাদিত, রাজা রামমোহন রায় প্রণীত গ্রন্থাবলীর অন্তর্গত ব্রহ্মসঙ্গীত-এ গানের সংখ্যা ১১৬। ব্রহ্মসঙ্গীত , ব্রাহ্মসমাজের উপাসনা সঙ্গীত।ধর্মের কঠিন তত্ত্বালোচনায়, সঙ্গীতের নান্দনিকতা ব্যবহার করে তিনি ব্রাহ্মধর্মের বিকাশ সাধনে প্রয়াসী হয়েছিলেন।সম্ভবত তিনি যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিতে বর্ণিত 'ব্রহ্মগীতি' বা 'ব্রহ্মগীতিকা' নামক একপ্রকার সাধনসঙ্গীত থেকে এই নাম গ্রহণ করেছিলেন। এই বিচারে ব্রহ্মসঙ্গীতের আকর ধারণাটি অতি সুপ্রাচীন।শুধুমাত্র উপাসনা নয়, সংগীতের এক বিশেষ ক্ষমতা হলো তা রাগ-এর মাধ্যমে, শব্দ বা শব্দহীন ভাবেই যেকোনো গূঢ় দর্শনকে মনের, চিন্তনের গভীরে নিয়ে যেতে পারে। হয়তো শব্দের ছদ্মরূপ এক অন্য ভাবের জন্ম দেয় , আর ভিতরের রস - আধ্যাত্মিকতার সন্ধান দেয়। ইতিহাসের এক আশ্চর্য সমাপতন , লালন ফকিরও একই বছরে জন্মেছিলেন। তার গানের শব্দকল্প আর ব্রহ্মসংগীত-এর মধ্যে কোনো মিল নেই। কিন্তু ভাবরস , একই। ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমদিকে রামমোহন কলকাতায় যখন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন, সে সময় তিনি কালী মীর্জা'র কাছে কিছুদিন রাগসঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন। যতদূর জানা যায় তিনি প্রথম ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেন ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। গানটি হলো− 'কে ভুলালো হায়'।আর শেষ গান রচনা করেছিলেন বিলেতে, ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে। কালক্রমে , মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল, শিবনাথ শাস্ত্রী, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ সেন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, স্বামী বিবেকানন্দ, সত্যজিৎ রায় লেখেন বহু ব্রহ্মগীতি।
জনমানসে তার প্রথম ও প্রধান পরিচয় , সতীদাহ বন্ধের মূল কারিগর হিসেবে। এই নিষ্ঠুর অনুশাসনের বিরুদ্ধে তিনি গর্জে ওঠেন। আজকের নারীবাদী আন্দোলনকারীরা একবার কল্পনা করে দেখুন , একটা মেয়েকে স্রেফ জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। নারীবাদীরা তাদের ভাষ্যে একবার অন্তত ঋণ স্বীকার করুক এই মহামানবের কাছে। বেদান্ত-উপনিষদগুলি বের করবার সময়ই তিনি সতীদাহ অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত প্রমাণ করে পুস্তিকা লিখলেন 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ', ১৮১৭ সালে লিখলেন 'সহমরণ বিরোধী প্রস্তাব' । শুরু হলো একাধারে তাত্বিক-তার্কিক লড়াই আর অন্যদিকে আইনি প্রস্তুতি। অবশেষে , লর্ড বেন্টিক -এর সাহায্যে ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বরে আইন পাস হয়। তবুও গোঁড়ারা চেষ্টা করতে লাগল যাতে পার্লামেন্টে, প্রিভি কাউন্সিল - এ বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। বহু-বিবাহ ও বর্ণভেদ প্রথার বিরুদ্ধেও রাজা রামমোহন রায় তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যান । নারী ও পুরুষের সমানাধিকার -এর জন্যে , নারীরা যাতে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে তার জন্য বিষয় সম্পত্তিতে নারীদের উত্তরাধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারেও রামমোহন রায়ের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না ।
রামোহন রায়, বিশ্ব -মানব ছিলেন। যে ব্যাক্তি আয়ারল্যান্ডের দুর্ভিক্ষে রিলিফ ফান্ড খোলেন, ইতালির স্বাধীনতা লোপে ধিক্কার জানান , তিনি ফরাসি বিল্পবের চিন্তাধারায় বিশ্বাস করবেন না, তাতো হতে পারে না। রামোহন বিশ্বাস করতেন যে, জাতিকে অজ্ঞতা ও জড়তা থেকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষা ও যুক্তিবাদ । তাই তিনি প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ ও শাশ্বত চিন্তাধারার সঙ্গে পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ ভাবধারার সমন্বয় ঘটিয়ে নবভারত গড়ে তােলার স্বপ্ন দেখেছিলে।রামমােহনের শিক্ষাচিন্তায় ভারতের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবের সঙ্গে আধুনিক পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের মিলন ঘটানাের প্রয়াস ছিল । তাই তিনি সারাজীবন ধরেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করে গেছেন । রামমােহনের শিক্ষাবিস্তারের মূল লক্ষ্য ছিল দেশবাসীকে বাস্তব জগতের উপযুক্তরূপে গড়ে ,তাদেরকে সমাজকল্যাণে নিয়ােগ করে দেশ ও জাতিকে প্রগতি ও উন্নতির পথে চালিত করা । ওনার প্রচেষ্টায় তৈরী হলো হিন্দু কলেজ - আজকের প্রেসিডেন্সি কলেজ , আংলো-হিন্দু স্কুল , স্কটিশ চার্চ কলেজ। স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে সংবাদপত্র প্রকাশ করলেন । ১৮২১ সালে প্রথমবার নিজের পত্রিকা বের করেন, নাম ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’। ইংরেজিতে এর নাম ছিল ‘ব্রাহ্মনিকাল ম্যাগাজিন’। ওই বছরেই বের করেন ‘সম্বাদ কৌমুদী’। কিন্তু ফারসি ভাষায় একটি সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন রামমোহন। ১৮২২ সালের ১২ এপ্রিল, নববর্ষের দিন কলকাতায় রামমোহন রায় তাঁর ফারসি পত্রিকা প্রকাশ করেন। নাম ‘মীরাৎ-উল-আখবার’। গোটা ভারতে এই প্রথম কোনো ফারসি সংবাদপত্র প্রকাশিত হল। এর পরেও লড়ে যেতে হয়েছিল, সংবাদপত্রের উপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে ভারতবাসীকে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দেবার দাবি জানিয়ে, ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দের 'প্রেস রেগুলেশন'-এর প্রতিবাদ জানিয়ে রাজা সুপ্রীম কোর্টে দরখাস্ত পেশ করেছিলেন ।
১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন বিভিন্ন বেপারে বৃটিশ পার্লামেন্টে আলোচনা করতে , দাবি জানাতে । দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর 'রাজা' উপাধি দিলেন। 'রাজাই' বটে। প্রথম ভারতীয় যিনি 'কালাপানি' পেরিয়ে ইংলন্ডে পা রাখেন , তখনকার সংবাদ পত্র অনুযায়ী , সারা লন্ডন শহর ভেঙে পড়েছিল ওনাকে দেখার জন্যে। পেলেন রাজকীয় অভ্যর্থনা। যদিও আর দেশে ফেরা আর হলো না। ১৮৩৩ সালে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলের কাছে স্টেপল্টনে মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিস্টলে, আর্নস ভ্যাল সমাধিস্থলে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে মধ্য ব্রিস্টলে তাঁর একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়।
ভারতের স্বাধীনতা ৭৫ তম উদযাপনের মুখে দাঁড়িয়ে । সুধী শ্রোতাগণ , এতক্ষন আপনারা যে লড়াইয়ের কথা শুনছিলেন,সেই লড়াই আজও জারি আছে। সরকার-মানুষ -মিডিয়া - গণতন্ত্র - শিক্ষা – সমাজ, নিজের অধিকারের জন্যে লড়ে চলেছে , প্রতিদিন। রাজা রামমোহন রায় -এর প্রলম্ববিত ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে, এই দেশে , এই বঙ্গদেশে ভাগ্যিস জন্মেছিলেন।