top of page

Indian Art -Orientalism to Post Modernism

First Chapter




ভারতীয় সভ্যতা প্রায় তিনহাজারেও বেশি পুরোনো। এই দেশের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে আছে বিস্ময়কর ইতিহাস, সংস্কৃতি। আমাদের প্রয়াস এই দেশ কে ফিরে দেখা। এবারের বিষয় ভারতীয় চিত্রকলার একাল -সেকাল। দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা বহুলাংশে অজ্ঞ। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বিশেষত লোকায়ত ইতিহাস অনেকাংশই উদ্ধার করা যায় নি। এসত্ত্বেও জানা যায় যে, ভারতীয় চিত্রকলার শুরু আদিম মানুষের গুহাচিত্র থেকেই। হোসনাবাদ, মির্জাপুর বা ভীমবেটকা প্রভৃতি স্থানের প্রস্তরচিত্রগুলো এর নিদর্শন। প্রস্তর যুগের (১৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) চিত্রকলা অন্যান্য দেশে পাওয়া গেছে। ভারতীয় চিত্রকলা ইতিহাস হয়তো তাতো পুরোনো নয়। তবে 'হয়তো'- ই। কারণ একথা আজ সর্বজনস্বীকৃত যে আদিম মানুষের চিন্তা- চেতনা বহুযুগ পরের সমাজব্যবস্থাতেও ছাপ রেখেছে। সুতরাং আমাদের চিত্রকলার উপরেও এই প্রাচীন চিত্ররীতির প্রভাব আছে তা বলাই বাহুল্য। স্পেনের আলতামিরা বা ফ্রান্সের লাসকক্সের মতো অসাধারণ, প্রাচীন গুহাচিত্র ভারতে দেখা না গেলেও তারই উত্তরাধিকার বহন করছে। এদেশে সিন্ধু সভ্যতাই আধুনিক নগর-সভ্যতার প্রাচীনতম নিদর্শন। কিন্তু এই ধ্বংসাবশেষে শিল্পকলার বিশেষ কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি। প্রাচীন ক্রিট-এ ইজিয়ান সভ্যতায় , মাটির পাত্র ও দেয়াল চিত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা গেছে। সিন্ধুসভ্যতায় মৃৎপাত্র গঠনের শিল্পরীতি যথেষ্ট উন্নত ছিল। কিন্তু দেয়াল চিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ক্রিটের অভিজ্ঞতা থেকে আন্দাজ করা যেতে পারে যে সিন্ধুসভ্যতায় দেয়াল চিত্রের প্রচলন ছিল; মৃৎপাত্রগুলির শিল্পরীতিতে বিমূর্তভাব ও চেতনা এক অসাধারণ ছন্দে প্রকাশলাভ করেছে।

অজন্তা চিত্রকলার সৃষ্টি হয় খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে কোনো এক সময়ে ,সম্ভবত সপ্তম শতাব্দীতে , বুদ্ধের বাণী বহন করছে এই চিত্রকলাগুলি। অজন্তার চিত্রকরেরা, গৌতম বুদ্ধের জাতকের কাহিনীকেই সুক্ষ ও বৈচিত্রপূর্ণ রং এবং রেখায়, গুহার প্রাচীরগাত্রে মূর্ত করে তুলেছেন। পরিবেশ, প্রকৃতি তার সব রূপরস তুলি ও ছেনিতে ঢেলে সৃষ্টি করেছে বুদ্ধের শান্তির সুললিত বাণী। এশিয়া-র চিত্রকলা ও প্রাচীর- ভাস্কর্যের সূত্রপাত হিসেবে পরিগণিত হয় 'অজন্তা রীতি '। এই রীতি আমরা দেখতে পাই, শ্রীলংকার সিগিরিয়া , আফগানিস্তানের 'বামিয়ান', চীন, কোরিয়া ও জাপানের 'হোরিযুজি' তে। ইলোরার স্তম্ভে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাকৃতিক রং, প্রধানত লাল ও কমলার বিভিন্ন শেড।

খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দী নাগাদ, ভারতীয় চিত্রকলায় ষর অঙ্গ গড়ে ওঠে। বাৎসায়ন তাঁর 'কামসূত্র; গ্রন্থে চিত্রকলার ছটি নীতি বিবৃত করেন যেমন রূপভেদ অর্থাৎ বহিরাকৃতি সম্পর্কে ধারণা , প্রমানাম বা আকৃতিগত জ্ঞান , ভাব বা অনুভূতি , লাবণ্য, তুলি ও রঙের শৈল্পিক ব্যবহার। বৌদ্ধ শিলিপির এই রীতি মেনে চলতেন।

ভারতীয় প্রাচীরচিত্র এবং ভাস্কর্যের রীতি আমরা , ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দেখতে পাই। ষষ্ঠ শতাব্দীতে 'চালুক্য বাদামি' , সপ্তম শতাব্দীতে 'পানামালাই', নবম শতাব্দীতে 'পান্ড্যান সিত্তানাভাসাল' , দশম শতাব্দীতে 'চোল তাঞ্জোর , বিজয়নগরের 'লেপাক্ষী' ষোড়শ শতাব্দীতে এবং গত শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত কেরালাতে - এই শিল্পরীতির প্রভাব ছিল | ষোড়শ - অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে পশ্চিম-ভারতে আত্মপ্রকাশ করে 'মিনিয়েচার' শিল্পকলা। প্রথমে তালপাতায় এবং পরে কাগজের পাণ্ডুলিপিতে এই চিত্রকলার সন্ধান মেলে। ছোট ছোট ছবিতে পাণ্ডুলিপির বিষয় ব্যাখ্যা করে ছিল এই চিত্রকলার উদ্দেশ্য। এছাড়াও জানা যায় , মধুবনী চিত্ররীতির কথা। বিহারের মিথিলা অঞ্চলের উত্তরাদি মঠেরএই চিত্ররীতি বহু প্রাচীন। কিংবদন্তি হলো, রামাযানের আমলের এই চিত্ররীতি। রাজা জনক , কন্যা সীতার সঙ্গে রামের বিবাহ উপলক্ষ্যে শিল্পীদের দিয়ে এই চিত্ররীতিতে ছবি আকিয়ে ছিলেন।

ভারতীয় চিত্ররীতির অন্যতম নিদর্শন ,'রাজপূত' শিল্পরীতি।অষ্টাদশ শতাব্দীতে, এই চিত্ররীতির প্রকাশ রাজপুতানার বিভিন্ন রাজার দরবারে।প্রত্যেকটি রাজপূত রাজ্যের শিল্পরীতি ছিল নিজ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। রাজপুত চিত্ররীতির বিষয় ছিল ; রামাযান , মহাভারত , কৃষ্ণের জীবন , নিসর্গচিত্র এবং মানুষ। প্রধানত , 'মিনিয়েচার; ছবি ছিল রাজপূত চিত্ররীতির বৈশিষ্ট্য। মোগল দরবারের অনেক শিল্পীই রাজপূত রাজাদের পৃষ্টপোষকতা লাভ করেছিলেন। যদিও নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে এই দুটি ঘরানা চারিত্রিক বৈশিষ্ঠে আলাদা।

'মহীশূর' চিত্ররীতি দাক্ষিণাত্যের গুরুত্বপূর্ণ চিত্রশৈলী। বিষয় হিসেবে তারা হিন্দু দেব-দেবী ও পৌরাণিক আখ্যান কে তুলে ধরতেন। এই চিত্ররীতি ছিল বেশ জটিল। কাঠের ওপর মোটা কাগজ লাগিয়ে তার ওপর প্রথমে ছবির স্কেচ করে নেওয়া হতো। এরপর জিঙ্ক অক্সাইড ও আরবি আঠা দিয়ে এক ধরণের লেই বানানো হতো। একে বলা হতো গেসো লেই। এরপর সরু তুলি দিয়ে ছবির যে যে অংশ উঠে থাকার সম্ভাবনা , যেমন গয়না - সেখানে লেই লাগিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হতো। এর পর উঠে থাকা অংশগুলি সোনার রাংতায় মুড়ে তার ওপর জলরং ব্যবহার করা হতো।

তামিলরনাডুর 'তাঞ্জোর' চিত্ররীতি আরেকটি দক্ষিণভারতীয় চিত্ররীতি। নবম শতাব্দীর এই চিত্ররীতি চোল রাজাদের পৃষ্টপোষকতা লাভ করেছিল। উজ্জ্বল রং ও সুক্ষ কাজের জন্য এই শৈলী বিখ্যাত।

মোগল সাম্রাজ্যের শাসনকালে , ষোড়শ - ঊনবিংশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠে মোগল চিত্ররীতি। ভারতীয় , পারসী ও ইসলামিক চিত্ররীতির মেলবন্ধন ঘটে। মিনিয়েচার ধর্মী এই শৈলীতে শিকার বা যুদ্ধজয়ী বীরের কীর্তি প্রাধান্য পেতো। সম্রাট আকবার , ফতেপুর সিক্রিতে নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করার পর পারস্য ও ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে চিত্রকরদের রাজধানীতে একত্রিত করেন। গুজরাট , গোয়ালিয়ার , কাশ্মীর থেকে প্রায় ১০০০ চিত্রশিল্পী এসে কাজ শুরু করেন বিখ্যাত পারসী চিত্রশিল্পী আব্দুস সামাদ ও মীর সৈয়দ আলীর ত্বত্তাবধানে। আমির হামজার জীবনী অবলম্বনে রচিত 'হামজা নামা' - র কাহিনী নিয়ে চিত্রটি আঁকেন কাপড়ের ওপরে। পারস্যের সাফাবি, শৈলীতে এই ছবি টি আঁকা হয়েছিল। জাহাঙ্গীর , দরবার ও পোট্রেট আঁকায় উৎসাহ দেন। এই সময়ের বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন , আবুল হাসান ও বিশান দাস। বিভিন্ন রীতির মিশ্র-প্রয়গ , মোগল চিত্ররীতি তে দেখা গেলেও পারস্য চিত্রকলার রোমান্স বা প্রেমের স্বর্গীয় ভাবধারা মোগল শিল্পে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। আকবর, সমকাল কে চিত্রকলায় ধরে রাখতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। এই প্রবণতা থেকে এক স্বত্রন্ত ঘরানা সৃষ্টি হয় যা আজ শিল্পীদের সাবজেক্ট নির্বাচনে উৎসাহ দেয়।

বিক্ষিপ্ত ভাবে, আরও কিছু চিত্ররীতি ভারতের আনাচে-কানাচে ছিল। প্রাশ্চাত্যের ডোনিয়ের রুশোর প্রাভভে গড়ে ওঠে কোটার চিত্রকলা। কিষাণগঞ্জের চিত্র তে দেখতে পাওয়া যায়, রাধা-কৃষ্ণর উপর লিখিত কাব্যকাহিনীর নিখুঁত রূপ। কুলু উপটোক্যা-র চিত্রাবলী আবার প্রচলিত লোকগীতি অনুযায়ী। আর কাংড়া উপত্যকায় , বিপুল রোমান্টিক চিত্রাবলীর প্রভাব দেখা যায়।

ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের (১৭৫৭-১৯৪৭) প্রায় দুশো বছরে , বাংলার শিল্পকলা বিচিত্র ধারায় বিকাশ লাভ করে। এই বিকাশে ইংরেজ শাসকশ্রেণির মনোভাব ও রুচির ব্যাপক প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিল্পের বিভিন্ন ধারা ও শৈলীকে চিহ্নিত করা যায়। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর রাতারাতি ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ইংল্যান্ড ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে বহু শিল্পি ভারতে আসে। কমপক্ষে এমন ৬০ জন শিল্পির সুনির্দিষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁরা প্রধানত তিনটি প্রয়োগরীতিতে কাজ করতেন যেমন ক্যানভাসে তেলরং; হাতির দাঁতের ওপর উপর মিনিয়েচার পেইন্টিং; এবং কাগজে জলরং ও তা থেকে এনগ্রেভিং পদ্ধতিতে মুদ্রণ। তেলরং-এর চিত্রশিল্পিদের বিশিষ্ট শিল্পীরা হলেন টিলি কেট্ল, জন জোফ্যানি, আর্থার ডেভিস, টমাস হিকি, ফ্রান্সিসকো রোনালদি, রবার্ট হোম, উইলিয়ম বিচ , মার্শাল ক্ল্যাকসান ও ভেরেশ্যাগিন। ওজিস হামফ্রে, জর্জ চিনারি ও স্যার চার্লস ডয়লী ছিলেন মিনিয়েচার পেইন্টিং চিত্রকলাকার বিশিষ্ট শিল্পি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , এনগ্রেভার ও মুদ্রক হিসেবে নাম কুড়িয়েছিলেন- উইলিয়ম হোজেস, ব্যাল্ট সলভিন্স, জেমস মোফাট, কলসওয়ার্দি গ্র্যান্ট, উইলিয়ম সিম্পসন , টমাস ও উইলিয়ম ড্যানিয়েল।

এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পি ছিলেন, যারা পেশাদার হিসেবে কখনোই কাজ করেননি । তাঁরা অবসর কাটানোর জন্য, শখ ও কৌতূহলবশত ছবি আঁকতেন । তাঁদের মধ্যে বিশিষ্ট শিল্পিরা হলেন জেমস বি ফ্রেজার, উইলিয়ম প্রিন্সেপ, এমিলি ইডেন, ম্যাডাম বেলসন, জি.এফ অ্যাটকিনসন প্রমুখ।যদিও তাঁদের চিত্রকলার নন্দনতাত্ত্বিক তাৎপর্য খুব বেশি নয়, তবুও তাঁরা আঠারো ও উনিশ শতকে বাংলার জীবন ও প্রকৃতিকে চিত্রকলায় ধরে রাখার ব্যাপারে বড় রকমের অবদান রেখেছেন। তাঁদের ঐ কাজগুলি অত্যন্ত সজীব, প্রাণবন্ত ও স্বাভাবিক। ফলে এর মাঝে চিত্রগুলির এক সুগভীর ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।

আঠারো শতকের গোড়ার দিকে মুগল সাম্রাজ্যের অবসানের পর, মুগল রাজদরবারের শিল্পিরা অযোধ্যা, পাটনা ও মুর্শিদাবাদের মতো প্রাদেশিক রাজ্যগুলিতে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। এসব রাজ্যের শাসনকর্তাদের আশ্রয়ে ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁরা তাঁদের সনাতন ঐতিহ্য অনুযায়ী চিত্রকর্মে নিয়োজিত থাকেন। তাঁদের এই চিত্রকর্মের ফসলগুলিকে সাধারণত ‘প্রাদেশিক মুগল শিল্পকর্ম’ বলা হয়ে থাকে। মুর্শিদাবাদের পতন ও উপনিবেশিক শাসকদের শাসনকেন্দ্র হিসেবে- কলকাতার অভ্যুদয়ের পর মুর্শিদাবাদ, এমনকি অযোধ্যা ও পাটনা থেকে শিল্পিরা জীবিকার সন্ধানে কলকাতায় এসে সমবেত হন। গোড়ার দিকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রশাসনিক প্রয়োজনে স্থাপত্য, উদ্ভিদতত্ত্ব ও প্রাণিতত্ত্ব সম্পর্কিত চিত্র, নকশা ও ডিজাইনের জন্য ইংরেজ শিল্পিদের নিয়োগ করতেন। কিন্তু ইংরেজ শিল্পিদের অত্যধিক বেতন দিতে হতো। তাই ব্যয়বাহুল্য কমানোর জন্য ক্রমান্বয়ে, স্থানীয় শিল্পিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদেরই নিয়োগ করা হয়। প্রদেশের শিল্পিরা অচিরেই এ নতুন কৌশল ও পদ্ধতি আয়ত্ত করার পর তার সাথে তাঁদের ঐতিহ্যিক জ্ঞান আত্মস্থ করে এক নতুন মেজাজের শিল্পকলা ও শিল্পরীতি গড়ে তোলেন, যাকে ‘কোম্পানি শিল্পকলা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের আশপাশ এলাকায় আঠারো শতকের শেষভাগ ও গোটা উনিশ শতকে চিত্রকলার ক্ষেত্রে আরেকটি স্থানীয় ধারা প্রচলিত ছিল। এই শিল্পরীতিটি এখন কালীঘাট চিত্রকলা বা কালীঘাট পটচিত্র নামে পরিচিতি লাভ করেছে। উপনিবেশিক শাসনের ফলে গ্রামবাংলার জনজীবনের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। গাঁয়ের পটুয়ারা তাদের জীবিকার উপায় হারাতে থাকে। এর ফলে কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চলগুলি থেকে প্রধানত ২৪ পরগণা, হাওড়া ও মেদিনীপুর জেলার অঞ্চলগুলি থেকে পটুয়ারা কালীঘাট মন্দিরের আশেপাশে এসে ভীড় জমাতে থাকে এবং সস্তা কাগজে ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জলরং-এ দেবদেবীর ছবি এঁকে সেগুলি ভক্ত ও তীর্থযাত্রীদের কাছে বিক্রি করতে থাকে। সস্তা দামের এই পটচিত্রগুলি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। গোড়ার দিকে পটুয়ারা সনাতন ধর্মীয় বিষয় নিয়েই ছবি আঁকতো। তবে, নাগরিক জীবনের সংস্পর্শে আসার পর তারা সমসাময়িক ও লোকায়ত সাবজেক্ট অবলম্বনেও পটের ছবি আঁকা শুরু করে। এভাবে ইংরেজ সাহেবদের জীবনের নানা বিষয় এবং কলকাতার বাবুদের জীবনকে নিয়ে পটচিত্রগুলি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পটুয়ারা তাঁদের চিত্রকর্মে অসাধারণ রসবোধের পরিচয় দিয়ে নগরজীবনের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে। সুনির্দিষ্টভাবেই বলা যায়, লোকপর্যায়ে পুতুল নাচ ও স্ট্যাটুইটাস থেকেই কালীঘাট পটচিত্র এর অনুপ্রেরণা এসেছিল।

১৮৩৯ সালে কলকাতায়, ‘মেকানিক্যাল ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভারতে চারু ও কারুকলা শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়, যদিও যথার্থ অর্থে এ শিক্ষার শুরু হয়েছে ১৮৬৪ সালে ‘ক্যালকাটা স্কুল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টের’ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে। এই প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীকালে ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্ট’-এ পরিণত হয়। এক্ষেত্রে গোড়ার দিকে যুগের সর্বাপেক্ষা বিশিষ্ট শিল্পীদের দুজন হলেন অন্নদাপ্রসাদ বাগচী ও শ্যামাচরণ শ্রীমানী। উনিশ শতকের আরেকজন চিত্রকর হলেন বামাচরণ ব্যানার্জী। তিনি তেলরং মাধ্যম ব্যবহার করে ভারতীয় অতিকথার উপাখ্যানে বর্ণিত দৃশ্যগুলি অঙ্কন করেন এবং সেগুলি জার্মানি থেকে মুদ্রণের ব্যবস্থা করেন। এর কিছুকাল পরে শিল্পি হিসেবে অধিকতর খ্যাত কেরালার রবি বর্মা, রোহিণীকান্ত নাগ ও শশীকুমার হেশ ছিলেন প্রথম তিন ভারতীয়, যাঁরা শিল্পকলায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইতালি যান। ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে, হেশ একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পি হিসেবে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। ওই শতকের শেষ নাগাদ শিল্পকলার ক্ষেত্রে পুনর্জাগরণবাদী শৈলীর অভ্যুদয় ও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের নাচারালিস্ট শিল্পশৈলী চিত্রকলার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ধারা হিসেবে অস্তিত্ব রক্ষায় সমর্থ হয়। বহু বিখ্যাত শিল্পি বিশ শতকের প্রথমার্ধে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে তাঁদের শিল্পসাধনায় নিয়োজিত থাকেন। তাঁদের মধ্যে বিশিষ্ট শিল্পিরা হলেন যামিনীপ্রসাদ গাঙ্গুলী, প্রহ্লাদ কর্মকার ও দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী।

ভারতীয় -শিল্পের অনুরাগী, ই.বি হ্যাভেল ১৮৯৬ সালে ক্যালকাটা আর্ট স্কুল-এর অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯০৫ সালে হ্যাভেল তাঁর স্কুলের উপাধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার জন্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মত করান। এরপর তাঁরা দুজনে মিলে তাঁদের ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিল্পকলার ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় প্রয়োগরীতির প্রবর্তন করেন। নন্দলাল বসু, সুরেন্দ্রনাথ কর, অসিতকুমার হালদার, কে ভেঙ্কটাপ্পা, সমরেন্দ্রনাথ গুপ্ত, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার, শৈলেন্দ্রনাথ দে প্রমুখ অবনীন্দ্রনাথের শিষ্য হিসেবে তাঁর সাথে যোগ দেন এবং এক নতুন শৈলীর পুনর্জাগরণবাদী চিত্রকলারীতি প্রবর্তনে তাঁকে সহায়তা করেন। ঐ সময়ে চলছিল জাতীয়তাবাদী চেতনার জোয়ার। ফলে তাঁদের প্রবর্তিত এই শিল্পরীতি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। বাস্তবিকপক্ষে বাংলার এই চিত্রকলা-রীতিই ছিল আধুনিক ভারতের প্রথম স্বীকৃত শিল্পশৈলী যা 'বেঙ্গল স্কুল অফ পেইন্টিং' নামে পরিচিত। হ্যাভেল ও অবনীন্দ্রনাথ ভারতীয় শিল্পকলার সনাতন শিল্পশৈলীর পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ যে পুনর্জাগরণবাদী শিল্পকলার প্রবর্তন করেছিলেন, তা প্রকৃতপক্ষে ছিল অজন্তা, মুগল, ইউরোপীয় প্রকৃতিবাদী ও জাপানি ওয়াশ প্রয়োগ-কৌশলের সমন্বয় বিশেষ। এই নতুন শিল্পকর্ম কার্যত সবটাই করা হতো জলরং-এ। আর এতে ভারতের ধর্মীয় ইতিকথামূলক, ঐতিহাসিক ও সাহিত্যসম্পর্কিত বিষয় তুলে ধরা হতো। ভারতের জাতীয়তাবাদীদেরও অনুমোদনও ছিল এতে। অবনীন্দ্রনাথ ধর্মীয় ও অতিকথামূলক সাবজেক্ট-এর চেয়ে ইতিহাস ও সাহিত্যের অধিকতর পক্ষপাতী ছিলেন। সূক্ষ্ম, পরিশীলিত রুচিবোধ, মাত্রাজ্ঞান ও পর্যবেক্ষণ শক্তির সাহায্যে তিনি তাঁর চিত্রকলায় একটা মোহনীয়তা ও সৌন্দর্যের উৎকর্ষ আরোপ করতে পারতেন। তবে, তাঁর অনুসারীরা তেমন প্রতিভার অধিকারী ছিলেন না। ফলে তাঁদের হাতে বাংলার শিল্পরীতি একটা বদ্ধ অবস্থায় এসে দাঁড়ায় এবং তা এক ধরনের ভাবালু ও ঘরসাজানো শিল্পকলায় পর্যবসিত হয়।

বিশ শতকের গোড়ার দশকগুলিতে যদিও শিল্পকলার ক্ষেত্রে, 'বেঙ্গল স্কুল' জনপ্রিয় প্রবণতা ছিল এবং শিল্পরীতি গ্রহণযোগ্যও ছিল, তবুও কোন কোন শিল্পি তাঁদের সৃষ্টির প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে চলতি ধারা-প্রবণতা কাটিয়ে শিল্পকলার ক্ষেত্রে স্বাতস্ত্র্য ও ব্যক্তিত্ব অর্জনে প্রয়াসী হন। এঁদের মধ্যে অধিকতর পরিচিতগণ ছিলেন, গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যামিনী রায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গগণেন্দ্রনাথ ছিলেন অবনীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভাই। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থে ভারতের প্রথম ব্যঙ্গচিত্র শিল্পি। তিনি কার্টুনচিত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার নানা বিষয়ে মন্তব্য প্রকাশ করতেন। এছাড়াও চিত্রকলার ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রথমবারের মতো অঙ্কিত চিত্রকে রেখা, আকৃতি, রং ও আলোর একটা সমাবেশমূলক আয়োজন হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি স্থাপত্য ও অভ্যন্তর সজ্জার ওপর চিত্রকর্ম সম্পাদন করেন এবং এ কাজে তিনি কিছুটা জ্যামিতিক কিউবিস্ট পদ্ধতিতে আলো ও ছায়ার সংঘাতময় বিন্যাস প্রদর্শন করেন। তিনি অতিকথা ও আধ্যাত্মিক ভাবনাগুলিকে আকৃতি ও রং-এ প্রকাশ করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অ্যাবস্ট্রাক্ট শিল্প পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।

ওই সময়ে লোকশিল্পকলার সম্ভাবনা ও গুণগত উৎকর্ষ সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত না হলেও যামিনী রায়ের আগে কেউই লোকশিল্পকলার উপাদানকে শিল্পকলার প্রধান ধারায় প্রয়োগের কথা ভাবেন নি। ১৯২১ সালে তিনি প্রচলিত চিত্রাঙ্কনশৈলী বিসর্জন দিয়ে এবং বাংলার লোকশিল্পকলা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে, আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলায় যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উদ্ঘাটন করেন, এর আগে আর কেউ তা করেন নি। তিনি ত্রিমাত্রিক সঙ্গতি প্রয়োগ, প্রেক্ষাপট, আলো ও ছায়া, যা পাশ্চাত্য প্রকৃতিবাদী শিল্পকলার উপাদান, সেসব ছেড়ে ঢালাও রঙের দ্বিমাত্রিক ফর্ম্যাট ও লোক-ঐতিহ্যের সাবলীল তরঙ্গায়িত রূপরেখার পদ্ধতি বেছে নেন। লোক-ভাবধারার মধ্য থেকে তিনি এক অধিকতর সূক্ষ্ম, সুপরিশীলিত ও সুসমঞ্জস চিত্রকলার জন্ম দেন, যার মাঝে অভিব্যক্ত হয় এক নতুন ধরনের সরল সৌন্দর্য। যুগপৎ এক ধরনের ভারতীয়ত্বও তাতে বজায় থাকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৯২০-এর দশকে চিত্রাঙ্কনে বিক্ষিপ্তভাবে প্রয়াসী হওয়ার চেষ্টা শুরু করলেও পরের দশকেই দেখা যায় তিনি ভারতের একজন প্রধান চিত্রশিল্পি হিসেবে আবির্ভূত হন। তাঁর চিত্রকলাগুলি, এমনও হতে পারে, পাশ্চাত্যের সমসাময়িক শিল্পরীতি সম্পর্কে তাঁর সুগভীর জ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত। তাঁর চিত্রকর্মগুলি একটা আদিম শক্তি ও সূক্ষ্ম শক্তির প্রবল সম্ভাবনার অনুভূতির জন্ম দেয়।

মুদ্রণ শিল্পকলা যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ও কৌশলে শিল্পকর্মগুলি ছাপা হয় সেগুলি উপনিবেশিক আমলে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টমাস ড্যানিয়েল ও তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র উইলিয়ম ড্যানিয়েল ভারতে 'টুয়েলভ ভিউজ অব ক্যালকাটা' (১৭৮৬-৮৮) বর্ধিত আকারে প্রকাশ করেন। প্রথম বাঙালি এনগ্রেভার ছিলেন রামচন্দ্র রায়। ১৮১৬ সালে, কলকাতায় মুদ্রিত তাঁর 'অন্নদামঙ্গল' ছিল প্রথম মুদ্রিত বাংলা বই যাতে এনগ্রেভ করা ছবি, নকশা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। গোড়ার দিকে ছাপাখানাগুলির মালিকানা ছিল ইংরেজদের। উনিশ শতকের শেষের দিকে বাঙালিরাও তাদের নিজেদের ছাপাখানার মালিক হয় এবং কাঠ ও ধাতব পাতে এনগ্রেভ করা আখ্যানমূলক ছবিসহকারে বই ছাপিয়ে তারা বের করতে শুরু করে। আর এ ধরনের প্রকাশনাগুলি 'বটতলার বই' হিসেবে পরিচিত হয়। কথিত এই বটতলার বইগুলি ছিল এক ধরনের সস্তা পুস্তিকা বিশেষ। এতে ছিল ধর্মীয় ও অতিকথামূলক আখ্যান ও ঘটনার সচিত্র পরিবেশনা, ছিল জনপ্রিয় গল্পকাহিনী ও শিশুতোষ রচনা। জনসাধারণের মাঝে এ ধরনের প্রকাশনার বিপুল প্রভাব ছিল। বই-এর এনগ্রেভিং-এর জন্য প্রথমদিকে শিল্পিদের আবির্ভাব ঘটে ছুতোর মিস্ত্রি ও ধাতুর কারিগরদের মাঝ থেকে। আর তাদের ঐ সময়কার কাজে কালীঘাট পটচিত্র থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণের আভাস পাওয়া যায়।

মুদ্রণের আরও একটি প্রয়োগ কৌশল বা পদ্ধতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই পদ্ধতির নাম লিথোগ্রাফি। বিভিন্ন শিল্পকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত শিক্ষার সুবাদে এই মুদ্রণ পদ্ধতি প্রবর্তন সম্ভব হয়। অন্নদাপ্রসাদ বাগচী ও তার সহযোগীরা ১৮৭৬ সালে ‘ক্যালকাটা আর্ট স্টুডিও’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখান থেকে তাঁরা ধর্ম ও অতিকথা সম্পর্কিত নানা দৃশ্যের লিথো পদ্ধতিতে মুদ্রিত ছবি বের করে বিক্রি করতে থাকেন। এছাড়া প্রতিকৃতি ও বর্ণমালাও এভাবে ছেপে বের করা হয়। এসবের বেশিরভাগ আবার মধ্যবিত্ত গৃহসজ্জার জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহূত হয়। তবে মুদ্রণ শিল্পকলায় সর্বাপেক্ষা সফল শিল্পি ছিলেন কেরালার রাজা রবি বর্মা। ১৮৯৪ সালে তিনি তাঁর নিজ ছাপাখানা স্থাপন করেন এবং ওলিওগ্রাফি পদ্ধতিতে তাঁর ছাপা ছবিগুলি বাংলাসহ সারা ভারতে অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

নতুন ধারার প্রবণতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ত্রিশের দশকের শেষ ও চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার পটভূমিকায় শিল্পি, লেখক ও অন্যান্য ক্ষেত্রের সৃষ্টিশীল মানুষের মাঝে এক নতুন ধরনের সমাজচেতনা গড়ে ওঠে। এই সময়ে শিল্পিরা বরাবরের অতিকথামূলক আখ্যান ও ঐতিহাসিক ঘটনা চিত্রায়নের নিগড় থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়াসী হন এবং তাঁদের শিল্পকর্মে সমসাময়িক জীবনকে তুলে ধরায় ব্রতী হন। এই প্রয়াসে তাঁরা নানা শিল্পিগোষ্ঠী গড়ে তোলেন। সেগুলির মধ্যে ‘ইয়ং আর্টিস্ট ইউনিয়ন’ ও ‘আর্ট রিবেল সেন্টার’ (১৯৩৩) উল্লেখযোগ্য। আর এ ধরনের শিল্পিদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন গোবর্ধন আশ, অবনী সেন, অন্নদা দে, ভোলা চ্যাটার্জী, অতুল বসু, গোপাল ঘোষ প্রমুখ। মুকুল দে ও রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই ধারার পথিকৃৎ ছিলেন।

১৯২০-এর দশকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে কলাভবন প্রতিষ্ঠা করেন। নন্দলাল বসুর নেতৃত্বে শান্তিনিকেতনে এক নতুন ধরনের শিল্পকলার উন্মেষ ঘটে। এই শিল্পকলা ছিল প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের শিল্পকলার এক মুক্ত সমন্বয়। আর এ ধরনের শিল্পবৈশিষ্ট্য নন্দলালের বিপুল প্রতিভাদীপ্ত ছাত্র বিনোদ বিহারী মুখার্জী ও রাম কিংকর বেইজ -এর শিল্পকলায় সমৃদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৯৪০-এর দশকের বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবন নিদারুণ বিপর্যস্ত হয় ও তারই পরিণতি লক্ষ্য করা যায় ১৯৪২-৪৩ সালের বাংলার মহামন্বন্তরের মাঝে। এই মহাদুর্ভিক্ষে অনেক লোকের মৃত্যু হয়। আর এই মহামানবিক দুর্দশায় বাঙালি শিল্পিদের বিবেক আলোড়িত হয়। বহু খ্যাতিমান শিল্পি এর বাস্তবতা তাঁদের শিল্পকর্মে তুলে ধরতে এগিয়েও আসেন।


Bibliography


  1. https://www.amazon.in/History-Indian-Anil-Sandhya-Ketkar/dp/8179254755

  2. https://www.amazon.in/Indian-Art-Oxford-History/dp/0192842218

  3. https://www.amazon.in/Elements-Indian-Art-Architecture-Iconography/dp/812460214X


4 views0 comments

Recent Posts

See All
bottom of page